ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি
ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, বিচার দাবিতে রাজপথে জনতা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর শরিফ ওসমান বিন হাদি (শরিফ ওসমান হাদি) এর মৃত্যুতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পল্টনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা, সেখানেই মৃত্যু
সংবাদমাধ্যম ও আন্দোলন সূত্র জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন এলাকায় এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
দীর্ঘ কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শাহবাগ অবরোধ, স্লোগানে মুখর রাজপথ
হাদির মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের পরপরই রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় “হাদির হত্যার বিচার চাই”, “খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার কর”, “জুলাই আন্দোলনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”—এমন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে।
ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে
রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ ও সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। বিক্ষোভকারীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলের প্রতিক্রিয়া
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা একে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, “একজন আন্দোলনকর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ভয়ংকর বার্তা।”
প্রশাসনের অবস্থান
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা বজায় রাখতে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সারাদেশে থমথমে পরিস্থিতি
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু দেশজুড়ে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি যেকোনো সময় আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও রাজপথের উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি।
তথ্য ও ছবি সংগ্রহ